করোনা ভাইরাসের এ সময়ে বিশ্বের সকল প্রান্তেই স্থবিরতা নেমে এসেছে। ইতিহাস ভেঙে জ্বালানী তেলের দাম ঋণাত্মক হয়েছে বিভিন্ন দেশে। ব্যস্ত আকাশ ও বিমান পথেও এসেছে স্তব্ধতা। অর্থনীতির গতিশীল সকল চাকাতেই সাময়ীকভাবে নিরবতা নেমে এসেছে। দেশে দেশে আমদানী-রপ্তানী বন্ধ হয়েছে। তবে এতো সকল থমকে যাওয়ার মধ্যেও ক্শণিকের জন্য থামেনি গ্রামীণ কুটির শিল্পের চাকা।
মানুষ জীবন- জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন রকম পেশায় কাজ করে বেচে থাকার চেষ্টা করে থাকে। ঠিক সেরকম একটি পেশা হলো কুটির শিল্প। আর সে কুটির শিল্পে কাজ করে মনোহরদী উপজেলার গোতাশিয়া ইউনিয়নের চুলা ও আড়াইআনি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ।
প্রতি বছরের বর্ষা মৌসুম এলেই শুরু হয় কুটির শিল্পের কাজ। মৌসুম শুরু হলেই নাজমা বেগমসহ পরিবারের সকল সদস্যের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। সন্তানের প্রতিও নজর দেয়ার সময় মেলে না।সংসার চালাতে উপার্জনের অবলম্বন হিসাবে নাজমা বেগমের মতো স্বপ্না আমেনা, সেলিনা, রমজান, আবুল কালাম নামে আরও অনেক নারী- পুরুষ এভাবেই জীবিকার পথ বেছে নিয়েছেন।
এ শিল্পের প্রধান উপকরন হলো বাঁশ ও বেত। পুঁজি না থাকায় তারা পাইকারদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে এ শিল্প কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আগের দিনে বাঁশের শলা বেত দিয়ে এ সব জিনিস বানানো হতো। এখন বেত তেমন পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও দাম বেশির কারণে বেতের বদলে নাইলনের সুতা বা প্লাষ্টিক ব্যবহার করা হয়।
জীবিকার জন্য সবাই এটাকে প্রধান পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন। ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের কম বেশী অধিকাংশ পরিবারই এ পেশার সাথে জড়িত। উপজেলার চুলা গ্রামের স্বপ্না জানালেন, সবাই বংশপরস্পায় জীবিকা নির্বাহকরে আসছেন।
এ শিল্প দুই যুগের ও অধিক সময় চলছে,,মাঝে একটা সময়ে এই শিল্প বিলুপ্তির পথে গেলেও র্বতমানে এর ব্যাপক বিস্তার লাভ করছে। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। দিনদিন বাড়ছে এ শিল্পের কারিগর সংখ্যা এ শিল্প শুধু দরিদ্র পরিবারই নয় স্বচ্ছল পরিবারের মানুষেরা ও সংসারের বাড়তি আয়ের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে এ শিল্প।
কালের আবর্তনে বিদেশি শিল্প ও বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে কুটির শিল্প ও বাঙালি সংস্কৃতি। এছাড়া অসাম্প্রদায়িক চেতনার লোক কমে যাওয়া বাঙালী সংস্কৃতি রক্ষায় প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে উদ্যোগ না নিলে এসবের পূণঃরুদ্ধার সম্ভব নয়।এ ছাড়া হারিয়ে যাওয়া এ শিল্পকে পুনঃরুদ্ধারে দল, মত নির্বিশেষে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদেরকে সহায়তা করতে হবে। বিদেশী সংস্কৃতির প্রভাব মুক্ত করে বিদেশী পণ্য বর্জন করে দেশীয় শিল্পে আরো বেশি নজর দিতে হবে।