আজ ২০ জানুয়ারি, শহীদ আসাদ দিবস। ১৯৬৯ সালের এই দিনে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের দমনমূলক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী জনতার প্রতিবাদে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন শহীদ আসাদুজ্জামান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রামী ছাত্রনেতা আসাদ ছিলেন এক সাহসী কণ্ঠস্বর, যিনি বাংলার মানুষকে মুক্তি ও স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন।
১৯৬৯ সালের উত্তাল রাজনৈতিক সময়ে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন তীব্রতর হচ্ছিল। আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ছাত্রসমাজ এবং সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। ২০ জানুয়ারি, ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে একটি মিছিলের নেতৃত্ব দেন আসাদ। স্বৈরাচারী সরকারের আদেশ অমান্য করে তিনি গণমানুষের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশের গুলিতে তিনি সেদিন শহীদ হন।
নরসিংদীর শিবপুরে জন্ম নেওয়া আসাদুজ্জামান ছিলেন মেধাবী ছাত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় কর্মী হয়ে ওঠেন। গণতান্ত্রিক অধিকার ও সামাজিক ন্যায়ের জন্য তাঁর দৃঢ় সংগ্রাম তাঁকে গণমানুষের একজন প্রিয় নেতা করে তোলে। আসাদের আত্মত্যাগ এবং গণআন্দোলন শহীদ আসাদের আত্মত্যাগের পর আন্দোলন আরও বেগবান হয়। তাঁর রক্ত যেন প্রজ্বলিত করেছিল পুরো জাতির মুক্তির স্পৃহা।
আসাদের শাহাদাত ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধের দিকে অগ্রসর হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।
জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করছে শহীদ আসাদকে। তাঁর আত্মত্যাগ বাঙালি জাতির হৃদয়ে চির অম্লান হয়ে থাকবে। শহীদ আসাদ আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয়, কীভাবে সত্য ও ন্যায়ের জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে হয়। শহীদ আসাদের আত্মত্যাগ আমাদের প্রেরণার উৎস। গণতান্ত্রিক অধিকার, ন্যায়বিচার, এবং মানবিক মর্যাদার জন্য তিনি যে আদর্শ স্থাপন করেছেন, তা চিরকাল বাঙালির পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে।
লেখক: মোঃ মেজবাহ উদ্দিন ভূইয়া, সাংবাদিক ও কলামিস্ট। কো-অর্ডিনেটর, পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ।