বৃটিশ সরকার পরিচালিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের নামানুসারে বর্তমান কক্সবাজারের নাম করণ করা হয়। কক্সবাজারে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক বালুময় সমুদ্র সৈকত। এটি দেখার জন্য অসংখ্য দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা ভীড় জমাচ্ছেন প্রতিদিন।চট্টগ্রাম মূল শহর থেকে ১৫২ কিলোমিটার দক্ষিণে এই পর্যযটন কেন্দ্র অবস্থিত।
গত ১৭ মার্চ কক্সবাজারে চমৎকার একটি ভ্রমণ উপভোগ করে এলাম। নরসিংদী জেলার অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নরসিংদী উদয়ন কলেজের ব্যবস্থাপনায় ভ্রমণটির আয়োজন হয়। ভ্রমণে অংশ নিয়েছিলেন নরসিংদী উদয়ন কলেজের একদল মেধাবী প্রভাষক ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্যরা। আমি এই কলেজের প্রভাষক হওয়ার সুবাধে ভ্রমণের যুক্ত হই।
প্রতিবছরই কলেজ থেকে প্রমোদ ভ্রমণের সুযোগ থাকে এবার গন্তব্য ছিল কক্সবাজার। ১৭ তারিখ রাতে মহানগর ট্রেনে চেপে আমরা কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। পরেরদিন সকালে সমুদ্র সৈকতের কাছাকাছি ডায়মন্ড প্যালেস নামক একটি হোটেলে চেক ইন করি সবাই।
কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর আমরা বেরিয়ে পড়লাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজার এবং তার আশেপাশের পর্যটন কেন্দ্রগুলি পরিদর্শনে। প্রথমে আমাদের গন্তব্য ছিল রামুর বৌন্দ মন্দির তারপর সেখান থেকে ইনানী সী বীচে। কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইনানী সী বীচ।
ইনানী সী বীচে যাওয়ার পথে আমরা থেমেছিলাম হিমছড়ি তে। সেখানে কয়েকশত সিঁড়ি ডিঙিয়ে প্রাকৃতিক ঝরণা দেখার কৌতুহলে উঠেছিলাম কিন্তু ঝরণা দেখতে পারিনি তার আগেই ক্লান্ত হয়ে নেমে আসি। আমার সাথের অনেকেই ঝরণা অবধি পৌঁছে ছিলেন।
সেখান থেকে আমরা আমাদের মূলগন্তব্য ইনানী বীচে পৌঁছায়।
ইনানী বীচে যাওয়ার জন্য আমরা দুইটি ট্যুরিস্ট জীপ ভাড়া করি। ইনানী যাওয়ার পথে ডানদিকে সাগরের হালকা সবুজ ও নীলাভ জলরাশি এবং বামদিকে পাহাড়ের অপূর্ব দৃশ্য দেখে বিষ্ময়ে হা হয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। তখন মনে বাজতেছিল একটি গানের কয়েকটি লাইন ‘ একি অপরুপ রুপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী জননী!’ ইনানী বীচে সামুদ্রিক প্রবাল ও সাগর তীরে সূর্যাস্ত মন কেড়ে নেয়।
ইনানী বীচে সমুদ্র তীরে সুর্যাস্ত দেখে ফিরে আসি হোটেলে। ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার খেয়ে আমরা চলে যাই সমুদ্র তীরে। রাতে সমুদ্রের ঢেউয়ের হঙ্কার শোনার আগ্রহে। রাতের সমুদ্র রহস্যময়। বড় বড় ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে তীরে সাথে কানে ভেসে আসছে সমুদ্রের হুঙ্কার। আমাদের টিমের লোকমান স্যার, মাধব স্যার, শাহপরাণ স্যার, কালাম স্যার উনারা বেঞ্চি ভাড়া করে সমুদ্রের তীরে বসে আড্ডা দিচ্ছেন আমি আর কলেজের অফিস সহকারি প্রশান্ত দাস হেঁটে বেরিয়েছি সমুদ্রের তীরে পায়ে জল স্পর্শ করে। আবার অনেকে মগ্ন ছিলেন কেনা কাটায়।
গভীর রাতে ঘুমানোর জন্য হোটেলে ফিরে এলাম। সকাল ৭ টায় ঘুম ভাঙলো। তারপর ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে আমরা চলে গেলাম সমুদ্র স্নানে। সমুদ্র জলে লাফালাফি, ছবি তোলা এবং ঢেউয়ের উপরে ভেসে চলা ইত্যাদি করে ভাল সময় কাটলো।
সমুদ্র স্নান শেষে রুমে ফিরে গোসল করে দুপুরের খাবার খেলাম হান্ডি রেস্টুরেন্টে। তারপর বার্মিজ মার্কেট ও শুটকির আড়ৎ থেকে ঘুরে আসলাম নানান পদের শুটকি আর বার্মিজ আচার কিনে হোটেলে ফিরে আসলাম। তখন চলছিল নীড়ে ফেরার প্রস্তুতি।
আমাদের এ ভ্রমণের পুরো খরচ বহন করেছে নরসিংদী উদয়ন কলেজ কর্তৃপক্ষ। আমরা ২২ জন ছিলাম প্রত্যেকেই অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন কলেজের কর্তা ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত হলেও সুখকর এ ভ্রমণের জন্য।