নরসিংদীর পলাশের ডাংগা জমিদার বাড়ি। যা বর্তমানে উকিলের বাড়ি নামে পরিচিত।
তৎকালীন ভারতবর্ষে এ অঞ্চল ছিল দেবত্র ভূমি।দেবত্র ভূমি বলতে এমন এলাকাকে বুঝায় যে এলাকার শাসক কাউকে খাজনা বা রাজস্ব দেয়না অর্থাৎ ওয়াকফ জমি।
ডাংগা জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন জমিদার লক্ষণ সাহা। তিনি এ জমিদার বংশের গোড়াপত্তন করেন। এ বংশের গোড়াপত্তন ও বাড়িটি নির্মাণের সঠিক কোনো সন তারিখ জানা যায়নি।
লক্ষণ সাহা ছিলেন আঞ্চলিক ছোট জমিদার। তিনি ঈসা খাঁর অধীনস্থ জমিদার ছিলেন বলে ধারনা করা হয়।কিন্তু ওয়াকফ জমির মালিকানার কারনে কোনো খাজনা বা রাজস্ব আদায় করতে হয়নি।
স্থানীয় লোকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, লক্ষণ সাহা তিন পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন। তারা হলেন নিকুঞ্জ সাহা, প্যারিমোহন সাহা ও বংকু সাহা। দেশ ভাগের সময় বংকু সাহা ভারতে চলে যান। স্বাধীনতার কিছুকাল আগে নিকুঞ্জ সাহাও ভারতে পাড়ি জমান। থেকে যান প্যারিমোহন সাহা।
প্যারিমোহন সাহার বৌদ্ধ নারায়ন সাহা নামে এক ছেলে ছিল। বৌদ্ধ নারায়ন সাহার কাছ থেকে স্থানীয় উকিল আহমেদ আলী কিনে নেন ৮০০০০(আশি হাজার টাকায়)। বর্তমানে বাড়িটি উকিল বাড়ি নামে পরিচিত। তবে বাড়িটি এখন পরিত্যাক্ত । বাড়ির মালিক পক্ষ কেউ আর এখানে বসবাস করেন না।
লক্ষণ সাহার জমিদার বাড়িটি দোতলা দালান। দালানের মেঝেতে দামি কষ্টি পাথরের ঢালাই এখনো দৃষ্টি কাড়ে। সাথেই রয়েছে সুন্দর কারুকার্য খচিত একটি মন্দির যা শুধু লক্ষ্মী পূজার সময় খোলা হয়।বাড়ির আঙিনায় রয়েছে বাগান বাড়ি,শান বাঁধানো পুকুর ।পুকুরের পাড়ে ছিল তিনটি মঠ কালের বিবর্তনে দুটি মঠ ধ্বংস হারিয়ে গেছে। শতবছরের ঐতিহ্য নিয়ে এখনো একটি মঠ ।
অর্ধ নির্মিত একটি পাকা বাড়িও রয়েছে সাথে।
পুরো জমিদার বাড়ির সকল স্থাপনা এখনো অনেক ভাল অবস্থানে আছে।শুধু পুকুর পাড়ের দুটি মঠ ধ্বংস হয়ে গেছে।
এখনো যেসব স্থাপনা অবশিষ্ট রয়েছে সেগুলি হলো অক্ষত জমিদার বাড়ির সাথে সুন্দর কারুকার্য খচিত একটি মন্দির ,একটি অর্ধনির্মিত প্রাচীণ বাড়ি। বাড়ির পেছনে রয়েছে সবুজের সমারোহ।পুরো জমিদার বাড়িটি উঁচু প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত।
পড়ন্ত বিকেলে জমিদার বাড়ির পুকুর পাড়ে দর্শনার্থী ভীড় করেন। যারা নিরিবিলি গ্রাম্য পরিবেশ তারা এখানে এসে সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন ।
পাবন দাস নামে একজন দর্শনার্থী বলেন, বাড়িটি দৃষ্টিনন্দন। অবকাশ যাপনের জন্য উত্তম স্থান। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে বাড়িটি পর্যটকদের সৌন্দর্য পিপাসা নিবারণ করবে এবং প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের সম্পদ ভান্ডারে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদুল হক বলেন, বাড়িটির এক সময় খুব জৌলুস ছিল । স্থানীয় লোকজন এ বাড়ির লোকদদের বেশ সম্মান শ্রদ্ধা করতেন।কিন্তু কালের কষাঘাতে আজ এটি মৃত বাড়ি বা ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, যেহেতু বাড়ির বর্তমানে কোনো মালিক নেই তাই সরকারি ব্যবস্থাপনায় যদি রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় তাহলে অনেক ভাল হবে।বাংলার প্রাচীণ ঐতিহ্যের নিদর্শনের স্বাক্ষী হিসেবে দীপ্যমান হবে।