মনোহরদীর বিতর্কিত ইউএনও হাছিবা গোপালগঞ্জে বদলি

আগের সংবাদ

নরসিংদী জেলা বিএনপির বর্ণাঢ্য র‍্যালি

পরের সংবাদ

দখল করে নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো ফিরে পাচ্ছে জামায়াত

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২৪ , ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ

জামায়াত নেতারা গত এক যুগে ইসলামী ব্যাংকসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন। যদিও একসময় এসব প্রতিষ্ঠানকে বিবেচনা করা হতো দলটির অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শক্তির নিদর্শন হিসেবে। তবে এ দৃশ্যপটে আবার পরিবর্তন আসা শুরু হয় গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর। 

হাতছাড়া হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে পুনরায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন জামায়াতের নেতারা। সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পর্ষদে নিজেদের অবস্থান শক্ত করাসহ হারানো অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি পুনর্গঠনে নানাভাবে কাজ করছেন তারা।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এক সময়ের অন্যতম শীর্ষ নেতা মীর কাসেম আলীর হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা ট্রাস্ট, দিগন্ত মিডিয়া, কেয়ারি লিমিটেডসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। দলটির অন্য নেতারাও এমন অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। শিক্ষা খাতে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় প্রধানতম ভূমিকা রেখেছিলেন দলটির নেতারা।

এক সময় এসব প্রতিষ্ঠানকে বিবেচনা করা হতো দলটির অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শক্তির নিদর্শন হিসেবে। কিন্তু ২০১২ সালে মীর কাসেম আলীসহ দলটির আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে আটক ও পরে আদালতের রায়ে তাদের অনেকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর থেকে পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আসতে থাকে। গত এক যুগে ইসলামী ব্যাংকসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ হারান জামায়াত নেতারা।

জামায়াত নেতাদের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বৃহত্তম হলো ইবনে সিনা ট্রাস্ট। এ ট্রাস্টের অধীনে স্বাস্থ্য সেবাবিষয়ক বিভিন্ন লাভজনক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইবনে সিনা হাসপাতাল, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস, ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার ও ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ। ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালসের কয়েকটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে দি ইবনে সিনা এপিআই ইন্ডাস্ট্রি, দি ইবনে সিনা ন্যাচারাল মেডিসিন, দি ইবনে সিনা পলিমার ইন্ডাস্ট্রি ও ইবনে সিনা কনজিউমার প্রডাক্টস লিমিটেড।

মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ইসলামী ব্যাংক। যদিও ইসলামী ব্যাংকের ৬৩ শতাংশ মালিকানায় ছিল মধ্যপ্রাচ্যের ১৩টি প্রতিষ্ঠান। এমনকি বাংলাদেশ সরকারেরও ৫ শতাংশ মালিকানা ছিল ব্যাংকটিতে। এছাড়া এদেশীয় উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিল জামায়াত ঘরানার প্রতিষ্ঠান ইবনে সিনা ট্রাস্ট, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ইসলামিক রিসার্চ ব্যুরো ও বায়তুশ শরফ ফাউন্ডেশন। ইবনে সিনা ট্রাস্টের প্রতিনিধি হিসেবেই মীর কাসেম আলীসহ জামায়াত সমর্থিতরা ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালক হতেন। আবার ইসলামী ব্যাংকের মালিকানায় গড়ে তোলা হয়েছিল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালও।

২০১৬ সালে সরকারের সহায়তায় ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ। পুনর্গঠন করা হয় ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। এর পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদে জামায়াত মতাদর্শের কারো প্রতিনিধিত্ব ছিল না।

অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত আগস্টেই এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে ইসলামী ব্যাংকে নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ব্যাংকে পাঁচজনকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয়েছে মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে। ২০১৬ সালে তাকে সরিয়েই এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে দেয়া হয়েছিল ব্যাংকটিকে।

ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও মীর কাসেম আলী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কেয়ারি গ্রুপ। এ গ্রুপের অধীনে আছে অন্তত ১০টি কোম্পানি। ২০১২ সাল থেকেই এসব কোম্পানি দুর্বল হতে থাকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কেয়ারি গ্রুপের কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক পরিস্থিতি একেবারেই সীমিত হয়ে এসেছিল বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

ইসলামী ব্যাংকের মতো রাজধানীর মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডও পুনর্গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামকে। পুনর্গঠন করা বোর্ড থেকে আগের সব ট্রাস্টিকে বাদ দেয়া হয়েছে। মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুর রব। শেখ হাসিনার পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে যোগ দিয়েছেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুর রব। তিনি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ছিলেন।

এছাড়া ২০২১ সালে চট্টগ্রামের ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাকালীন ট্রাস্টিদের মধ্য থেকে জামায়াত নেতাদের বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন করে তৎকালীন সরকার। সে সময় চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামদ্দিন নদভীকে বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) উপাচার্যেরও পরিবর্তন করা হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কেএম গোলাম মহিউদ্দিন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে যোগদান করেন।

দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশন লিমিটেডেরও (দিগন্ত টিভি) চেয়ারম্যান ছিলেন মীর কাসেম আলী। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলটির সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক সপ্তাহের মধ্যেই দিগন্ত টেলিভিশনের ওপর দেয়া সাময়িক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১১ বছর পর আবারো সম্প্রচারে আসছে চ্যানেলটি।

নরসিংদী মিরর/এফএ