নরসিংদীতে কারখানা উদ্বোধন
আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ ডিজিটাল ডিভাইস রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বিশ্বে নিজেদের সক্ষমতার পরিচয় দেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বুধবার বিকেলে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার আমতলা এলাকায় ফেয়ার গ্রুপের স্যামসাং এসি কারখানার উদ্বোধন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ফেয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব ভাইয়ের সাহসী নেতৃত্বে গত দুই বছরে স্যামসাং এখানে প্রায় ১৫ লাখ মোবাইল তৈরি করেছে। আগামী বছর থেকে এই কারখানা থেকে ২৫ লাখ মোবাইল তৈরি করবে। আগামী বছর থেকে বাংলাদেশে আর কোনো স্যামসাং মোবাইল আমদানি হবে না। এমনকি এস ২১ ফোন তৈরি করছে। আগামী দুই-এক বছরের মধ্যে স্যামসাংয়ের টিভি, রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশন ও স্মার্টফোন কেবল বাংলাদেশে তৈরিই হবে না বিদেশে রপ্তানী শুরু হবে। অল্পদিনের মধ্যেই আমরা ডিজিটাল ডিভাইস রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিণত হবো ।
মন্ত্রী আরো বলেন, ২০০৪ সালে স্যামসাং বাংলাদেশে ১৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু বিএনপি-জামাত জোট সরকারের অসহযোগীতা ও হাওয়া ভবনের অনৈতিক প্রস্তাবের কারণে স্যামসাং সেই বিনিয়োগ বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে ভিয়েতনামে করে। যার ফলে ভিয়েতনাম গত ১৫ বছরে ১ লক্ষ ৬০ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হয়েছে। সারা বিশ্বে তারা রপ্তানী করে ৭০ বিলিয়ন ডলার আয় করছে। যা বাংলাদেশের করার কথা ছিলো।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন করে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে। যার ফলে আইসিটি খাতে ১৫ লক্ষ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়েছে। আইসিটি খাতে সফটওয়ার, হার্ডওয়ার রপ্তানী করে ১ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। যা ২১ সালে ২০ লক্ষ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হবে। ২০২৫ সালে আইসিটি খাত থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি সনদপত্র শিক্ষার উপর গুরুত্ব না দিয়ে কর্মমুখী শিক্ষার উপর নজর দিতে বলেছেন. দক্ষতা নির্ভর শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়ে দক্ষ জনবল গঠন করে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।দক্ষজনবল সৃষ্টির লক্ষে নরসিংদীতে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিওবেশন সেন্টার ও হাইটেক পার্ক গড়ে তোলা হবে বলেও ঘোষনা দেন তিনি।
এসময় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত এইচ ই লি জ্যাং কেয়ান, আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম এবং নরসিংদীর জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স বাংলাদেশের বাবস্থাপনা পরিচালক হয়্যানসাং উ, স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স বাংলাদেশের প্রাক্তন বাবস্থাপনা পরিচালক স্যাংওয়ান ইউন, ফেয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান রুহুল আলম আল মাহবুব, ডিরেক্টর মুতাসিম দাইয়ান, উপদেষ্ঠা মেজর জেনারেল হামিদ আর. চৌধুরী, আরসিডিএস, পিএসসি (অব.), চীফ মার্কেটিং অফিসার জনাব মেসবাহ উদ্দিন, ডিরেক্টর অপারেশন ফিরোজ মোহাম্মদ, হেড অফ মার্কেটিং জনাব জে. এম. তসলিম কবীরসহ সরকারের অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, স্যামসাং এবং ফেয়ার গ্রুপের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ফেয়ার গ্রুপের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত স্যামসাং টানা ৩ ঘণ্টা ধরে কারখানা এলাকা পরিদর্শন কালে সেখানে কমর্রত কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করেন পলক।
উল্লেখ : ২০১৭ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করেন প্রায় ২৩ একর জায়গার উপর নির্মিত ফেয়ার ইলেক্ট্রনিক্সের কারখানা। এখানে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানী স্যামসাংয়ের টিভি,ফ্রিজ,মোবাইল ফোন,ওভেন সহ ইলেকট্রনিক্স বিভিন্ন পন্য উৎপাদন করা হয়। যাত্রার তিন বছরের মাথায় নতুন করে যুক্ত হয় আধুনিক প্রযুক্তি সহ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এয়ার কন্ডিশনার উৎপাদন । ফেয়ার গ্রুপের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত স্যামসাং কোম্পানী গত দুই বছরে প্রায় ১৫ লাখ হ্যান্ডসেট তৈরি করেছে। আগামী বছর থেকে এই কারখানা থেকে এক লক্ষ এসি ও ২৫ লাখ স্মার্টফোন তৈরি করার লক্ষ মাত্রা নিধারন করা হয়েছে। এমনকি আগামী বছর থেকে বাংলাদেশে আর কোনো স্যামসাং হ্যান্ডসেট আমদানি হবে না।
এখান থেকে এস ২১ ফোন তৈরি করছে। আগামী দু-এক বছরের মধ্যে স্যামসাংয়ের টিভি রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশন ও স্মার্টফোন কেবল বাংলাদেশে তৈরিই হবে না বিদেশে রপ্তানী শুরু হবে। এই কারখানাটিতে বর্তমানে ১৭০০ কর্মী কাজ করছেন।