করোনা পরিস্থিতিতে রাস্তার লকডাউন আর ত্রাণের দাবিতে মানুষের অবস্থানের সংবাদ নিতে রাস্তায় বের হয়েছিলাম। হঠাৎ মগবাজারে ট্রাক থেকে ত্রাণ বিতরণের দৃশ্য চোখে পড়লো। ট্রাকের পিছনে মানুষ ছুটছে। আমরাও ছুটলাম ট্রাকের পিছু পিছু। রাস্তায় থেমে থেমে রিক্সাচালক, বিভিন্ন গাড়ির চালক আশেপাশের মানুষদের ত্রাণ দেয়া হচ্ছিলো। এভাবেই দেখা মিলে একদল তরুণের। যাদের নেতৃত্বে রয়েছেন আবার একজন নারী সদস্য।
বলছিলাম “ফিড এ ফ্যামিলি” নামের একটি ফেসবুক পেজের কথা। মাত্র সাতজন তরুণের এ দলটি ২২ মার্চে তাদের যাত্রা শুরু করে। দেড় মাসের ব্যবধানে ৮টি প্রজেক্টে প্রায় ২ হাজার ১৯টি পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করে বিভিন্ন শ্রেণীতে অধ্যয়নরত এ তরুণরা। দেশি বিদেশি বিভিন্ন পরিচিতদের সহায়তায় রমযান উপলক্ষ্যে ১ মাসের খাবার পৌছে দেয়া হয় ২৫০টি পরিবারে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব খাবারের প্রতিটি প্যাকেটে ব্যয় করা হয় ২ হাজার টাকা। পরবর্তীতে রাস্তায় আবারও খাবার দিতে গিয়ে পাঠাও রাইড শেয়ার চালকদের দুর্দশা তাদের নজরে আসে। নতুন প্রজেক্ট হাতে নিয়ে পাঠাওয়ের সাথে যোগাযোগ করে ২৫০ জনের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়।
পরবর্তীতে বাংলাদেশ ফুড ব্যাংক ও নিজেদের সংগ্রহ করা অর্থায়নে ২৫০ পাঠাও চালকের মাঝে ম্যাসেজ করে খাবার পৌছে দেয়ার প্রজেক্ট চালু করে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ত্রাণ নিতে মানুষের জটলা দেখা গেলেও এ সংগঠনের ত্রাণ ব্যবস্থাপনায় ছিল একদম ভিন্নচিত্র। ম্যাসেজ করে বার্তা পাঠিয়ে স্থান জানিয়ে দেয়ার পর চালকরা সময় মতো এসে নিজেরদের ম্যাসেজ দেখিয়ে প্যাকেট নিয়ে যাচ্ছিলেন।
মানুষের ব্যাপক সাড়া পেয়ে উচ্ছ্বসিত তরুণরা তাদের এ কাজকে আরও সামনে এগিয়ে নিতে চায়। এ সময়ে ঝুঁকি নিয়ে এসব কাজ কেন করছেন প্রশ্ন ছিল সংগঠনটির নারী প্রধান বুশরা ওয়াহিদের কাছে। মহামারি বিপর্যয়ের এ সময়ে আশেপাশের মানুষের দুর্ভোগ দেখেই এ কাজ শুরু করেছিলেন তারা। মানুষকে সহায়তা করতে পেরে মানবতার জন্য কিছুটা উপকার করতে পারছেন বলে নিজেদের মানবিক অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছিলেন তালহা, আসেম, রনি, আকাশ ও আরিয়ানারা। দশম শ্রেনী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেনীতে অধ্যয়নরত এসব তরুণের দিন-রাত পরিশ্রমে কিছু মানুষের মৌলিক চাহিদা অল্প কিছুদিনের জন্য হলেও পূরণ হচ্ছে। এভাবেই করোনাকালে মানবিকতার স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছে দেশের অসংখ্য তরুণ। সকল মানবিক তরুণ শক্তিতে আজ শুধুই স্যালুট।