নানা সংকটের মধ্যেও দেশে বাড়ছে কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব। বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৩ হাজার ৮৩৯টি। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ৬৫ লাখ ৯৫ হাজার ২১১টি। এর মধ্যে কোটি টাকার বেশি হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৩ হাজার ৮৩৯টি। এ সময়ে ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ১৪ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৪৩ দশমিক ৩৯ শতাংশই কোটিপতিদের দখলে। তাদের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৫৬ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা।
কোটিপতিদের আমানত বৃদ্ধি পাওয়াকে ভালো চোখে দেখছেন না অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ। সমাজে বৈষম্য ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন একটি গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার কারণে দেশে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন তিনি।
এ বিষয়ে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর অর্থনীতির নিয়মে চলছে না। বঙ্গবন্ধুর অর্থনীতি ছিল আমাদের প্রবৃদ্ধি যতই হোক তা সমান ভাগে দেশের জনগণের মধ্যে বন্টন হবে। কিন্তু এখন তা হচ্ছে না। বর্তমানে প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ হচ্ছে কিন্তু তা সমানভাবে বন্টন হচ্ছে না। সম্প্রতি সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণা বলছে, প্রবৃদ্ধি শতকরা পাঁচ ভাগ লোকের মধ্যে সীমাবদ্ধ। যার কারণে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, মানে বড়লোক বাড়ছে।’
‘সাধারণ জনগণ প্রবৃদ্ধির সুফল পাচ্ছে না। তার প্রমাণ করোনার মধ্যে আমরা পেয়েছি। যাদের আমরা নিম্ন-মধ্যবিত্ত বলি তারা মাসখানিক আয় না থাকায় টিকে থাকতে পারছে না। তার মানে মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্তের কাছে টাকা-পয়সা নেই। দেশর অর্থ মুষ্টিমেয় কিছু লোকের কাছে পুঞ্জি হয়ে আছে। এটি হতেই থাকবে যতদিন পর্যন্ত এ নিয়ম পরিবর্তন না হবে’-যোগ করেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ।
আলোচিত সময়ে ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ২৮৩ জনে দাঁড়িয়েছে। ২০১৮ সালে যা ছিল এক হাজার ১৪৮ জন। অর্থাৎ এক বছরে ৫০ কোটি টাকার বেশি হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে ১৩৫ জন।