১৩ ফেব্রুয়ারী কৃষিবিদ দিবস ____১৯৭৩ সালে পালন শুরু হয় এই দিবস টি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে কৃষিবিদ দিবস উপলক্ষে শিক্ষিত তরুণদের কৃষি ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান করছি।
অনেক তরুণ চাকরির জন্য আসেন। তারা সরকারি চাকরি আর ব্যাংকের চাকরির জন্য আগ্রহ দেখান। কিন্তু কেউই কৃষক কিংবা উদ্যোক্তা হওয়ার হতে চান না।
“আমাদের দেশে অনেকেই দেখি কর্মহীন প্রবৃদ্ধি নিয়ে কথা বলে। কিন্তু তরুণ সমাজ নিজে থেকে কিছু করার আগ্রহ দেখায় না। বরং বিদেশে পাড়ি জমাতে তাদের আগ্রহ বেশি।”
বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর হলেও গত দুই দশকে তা পরিবর্তিত হচ্ছে। ২০০০-২০০১ অর্থবছরে দেশের জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল ২০ দশমিক ৮ শতাংশ; ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ১ শতাংশে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে তা আরো কমে এসেছে।
কৃষি অর্থনীতিতে ”পোশাক রপ্তানি আর বিদেশ থেকে অদক্ষ শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্সকে বড় করে দেখা হলেও বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতির মূল ভিত্তি হিসাবে কৃষি এখনও প্রধান ভূমিকায়।”
এই খাতে তরুণদের আগ্রহী করতে পরিবেশ তৈরিতে গুরুত্ব দিতে হবে “নানামুখী সামাজিক ও বাজার ব্যবস্থাপনার বাধার সম্মুখীন হচ্ছে কৃষিখাত। শিক্ষিত তরুণদের এই পেশার প্রতি যথেষ্ট অনীহা আছে। এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে অথবা কৃষিকে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে হবে যাতে শিক্ষিত তরুণরা নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত হয়।
“বর্তমানে যারা কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত আছে তাদের আয় বাড়াতে এবং তারা যাতে ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। তাহলে কেবল তারা স্বাচ্ছন্দে নিজের সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে পারবে এবং কৃষির প্রতি ওই সন্তানের একটা আগ্রহ সৃষ্টি হবে।”
পাশাপাশি তরুণদেরও নিজে থেকে উদ্যোগী হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।“নতুন প্রজন্মের কেউ উদ্যোক্তা হতে চাইলে আগে নিজে নিজেই কাজে নেমে পড়তে হবে। উদ্যোক্তা হওয়া মানে নিজেই নিজেইর অফিসের কর্তা বনে যাওয়া নয়।
কৃষিতে তরুণদের উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করলে দেখা যায় “তরুণরা কেবল ঢাকায় চলে আসতে চায় অথবা মনের মধ্যে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার বাসনা নিয়ে ঘুরে। তার কেউ কৃষিকাজে আগ্রহ পায় না। মাঠে যারা কৃষিকাজ করেন তাদের অধিকাংশের বয়স ৪০ বছরের বেশি। মাত্র ২০ শতাংশ কৃষিকর্মী পেয়েছি যাদের বয়স ৩৫ বছরের নিচে।
“কৃষক এখনও সমাজে করুণার পাত্র। কেউ তাদের মর্যাদার কথা বলে না। কৃষকের সামাজিক এবং আর্থিক মর্যাদা বাড়ালে তরুণরা এইদিকে ঝাঁপিয়ে পড়বে, যেমনি ভাবে এখন সরকারি চাকরির দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
এই অগ্রযাত্রায় হঠাৎ বাধা হয়ে আসে মহামারি কোভিড-১৯। উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় কৃষকদের। এরপর লকডাউনে অচল হয়ে যায় সবকিছু, কৃষকরা হয়ে পড়ে বেকার। এরই মাঝে ঘূর্ণিঝড়, একাধিক বন্যার মতো দুর্যোগে ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে কৃষি উৎপাদন। যার প্রভাব পড়েছে বর্তমান বাজারে। তবে করোনা মহামারিতে বিপুল খাদ্যসঙ্কটের যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, সেরকম কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি।
সেজন্য আমাদের কৃষক ও কৃষিবিদরা অবশ্যই কৃতজ্ঞতা পাওয়ার যোগ্য, সেটি না বলার কোনো অবকাশ নেই। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ কৃষির মানোন্নয়নে যুগোপযোগী কর্মপন্থা ঠিক করার এখনি সময়।