রাত পোহালেই নরসিংদী পৌরসভা নির্বাচন। ৯৯ হাজার ৪ শত ৫৪ জন ভোটার নিয়ে প্রথম শ্রেণির পৌরসভাটি নতুন পৌর পিতা নির্বাচনের অপেক্ষায়। পৌর পিতার হওয়ার মরণপণ করে মাঠে আছেন ৪ জন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন নরসিংদী শহর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন বাচ্চু। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল মনোনীত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে হারুন অর রশিদ । মোবাইল প্রতীকে স্বতন্ত্র ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এস এম কাইয়ুম। হাতপাখা প্রতীকে আছেন আসাদুল হক হামিদ।
নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। ১২ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত থেকে সকল ধরনের প্রচারণা বন্ধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন অফিস। প্রার্থীরাও তাদের সকল আয়োজনের ইতি টেনেছেন সুচারু ভাবে। এখন অপেক্ষা নির্বাচনের। দেখা পালা ব্যালট যুদ্ধে কে বিজয়ী হন।
নরসিংদী পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে মাঝে দু বার বাদ দিলে পুরো সময়ই মেয়রের চেয়ার ছিল আওয়ামীলীগের দখলে। বর্তমান মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল ও আওয়ামীলীগের দায়িত্বশীল একজন নেতা। আগের থেকে পৌর এলাকার ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও রাজনীতি চর্চার কোনো পরিবর্তন আসেনি। বরাবরের মতই রাজনৈতিক রেষারেষি লেগেই আছে।
পুরো জেলার মানুষ নরসিংদী পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে নানান কল্পনা জল্পনা করছেন। অনেকের ধারনা এবার সুষ্ঠু নির্বাচন কোনোভাবেই সম্ভব না। কারন আওয়ামী পন্থি ও স্বতন্ত্রপ্রার্থী দুজনেই মারমুখী অবস্থানে।
নরসিংদী পৌর এলাকার বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হয় নরসিংদী মিররের তারা বলেন, কালকে নির্বাচন আমগো ডর লাগে ভোট কেন্দ্রে যাইতে। যদি মনে করেন একটা গন্ডগোল লাগে তাইলে তো গোলাগুলি পর্যন্ত অইব। গত ইলেকশনেও আমগোর চোহের সামনে ইমুন ঘটনা ঘটছে।
তবে নির্বাচনী প্রচারণায় দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ভাবেই চলেছে সব।তবে ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে বিএনপি প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে বিএনপির শীর্ষ দুই নেতাকে গ্রেফতারের খবর ছড়ালেও অস্বীকার করেছে পুলিশ। নির্বাচনের ঠিক আগ মুহুর্তে এমন খবর জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।
বিএনপি নেতারা বলেন, নির্বাচনের আগে প্রতিপক্ষ কে বিনা কারনে গ্রেফতার একটি জঘন্য কাজ। আগামিকালের নির্বাচন নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত। আওয়ামীলীগের ভোট কারচুপির ইতিহাস পুরনো। কেন্দ্র দখল করে ছাপ্পা ভোট, বিএনপির এজেন্ট কে বের করা দেওয়া এগুলি তাদের নির্বাচনী রুটিন কাজ। তবে এবার আমরাও থাকব মাঠে নির্বাচন যেন কোনোভাবে প্রশ্ন বিদ্ধ না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখব।
তবে এবার নির্বাচনে কোনোরুপ কারচুপি বা গন্ডগোল হবেনা বলে আশ্বাস দিয়ে জেলাপ্রসাশক ও পুলিশ সুপার। তাঁরা জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরো নির্বাচনে থাকবে কয়েকস্তর নিরাপত্তার ব্যবস্থা যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। বলা হয় নির্বাচনে ১৮ জন নির্বাহী ও ১ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১২ টি গাড়িতে ৭২ জন র্যাব সদস্য ও১৫০ জন বিজিবি সার্বক্ষণিক টহলে থাকবেন।প্রতি কেন্দ্রে ৭ জন পুলিশ সদস্য, পুলিশের একটি মোবাইল টিম, প্রতি ৪-৫ টি কেন্দ্র নিয়ে পুলিশের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন স্ট্রাইকিং ফোর্স কাজ করবে। পুলিশের পাশাপাশি প্রতি কেন্দ্রে ৯ জন আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।
নির্বাচনকে যেকোনো মূল্যে সুষ্ঠু করার সকল ধরনের প্রস্তুতি আছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
এতসব প্রস্তুতির কথা শুনেও ভোটাররা বলছেন, কেন্দ্রে এমন ব্যবস্থা সব নির্বাচনেই থাকে। পরে দেখা যায় পুলিশ শুধু নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। যে যা করার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনেই। তবে এবার জেলা প্রশাসন ও নতুন পুলিশ সুপারের প্রতি বিশ্বাস রাখছি দেখা যাক কাল কি হয়। ভালভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হোক এটাই চাওয়া। তবে মন থেকে শঙ্কা দূর হচ্ছেনা।