জ্ঞানাঞ্জলি গণগ্রন্থাগারের ৪র্থ বর্ষপূর্তি উৎযাপন 

আগের সংবাদ

নজরপুরে ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে নবিপুর গ্রুপের জয় 

পরের সংবাদ

মেয়র প্রার্থী বাচ্চু, অস্থিরতা কামরুলের

মো. রাসেল আহমেদ, নরসিংদী

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১ , ২:৪৭ অপরাহ্ণ

নরসিংদী পৌরসভা নির্বাচনের ফলই মেয়র প্রার্থী আমজাদ হোসেন বাচ্চুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঠিক করে দিবে। তবে এই নির্বাচন একই সঙ্গে মেয়র কামরুজ্জামান কামরুলের জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ। দলীয় প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ জড়িয়ে গেছে।

আওয়ামীলীগের স্থানীয় অনেক নেতা বলছেন, নরসিংদীতে আওয়ামীলীগের বিভক্তি, রাজনৈতিক জটিলতা অনেক পুরনো। পৌরসভা নির্বাচন তা নতুন করে আবার সামনে নিয়ে এসেছে। নির্বাচনের পরেও এর রেশ থেকে যাবে।

পৌরসভা নির্বাচনের প্রথম দিকের প্রচারণা নিরবে চললেও এখন চলছে পুরোদমে প্রস্তুতি। নরসিংদী পৌরসভায় আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী আমজাদ হোসেন বাচ্চু হলেও পুরো নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে মেয়র কামরুজ্জামান কামরুলের তত্ত্বাবধানে। তাঁর ব্যস্ততা দেখে মনে হচ্ছে প্রার্থী স্বয়ং তিনিই।

মেয়র কামরুজ্জামান কামরুলের দায়িত্বশীল এক সমর্থক নাম না প্রকাশের শর্তে নরসিংদী মিরর কে বলেন, এই নির্বাচনে কামরুল ভাইয়ের অর্জনের কিছুই নেই তবে হারানোর ভয় আছে। যদি দলীয় প্রার্থী বিজয়ী না হয় তাহলে পুরো দায় বর্তাবে কামরুল ভাইয়ের ঘাড়ে। কারণ তার মেকানিজমেই আজকে বাচ্চু ভাই মেয়র প্রার্থী। যদি বাচ্চু ভাই কোনো কারণে পরাজিত হয় তাহলে জেলা আওয়ামীলীগের অপর পক্ষ শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এতে কামরুল ভাই শ্যাম-কুল দুই ই হারাবেন।

কামরুজ্জামান কামরুল নরসিংদী শহর আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি। নরসিংদী পৌরসভার সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রয়াত মেয়র লোকমান হোসেনের ছোটভাই। তিনি নরসিংদী পৌরসভার মেয়র পদে চলমান দায়িত্বে আছেন। তার ভাবি প্রয়াত লোকমান হোসেনের স্ত্রী জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ। দলে নিজের অনুসারি লোকবল ও প্রভাব বিবেচনায় এ নির্বাচনেও মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কামরুল। কিন্তু মনোয়নয়ন পান প্রভাব ও পরিচয় বিবেচনায় অনেকটা পিছিয়ে থাকা আমজাদ হোসেন বাচ্চু।

কামরুজ্জামান কামরুল দুই মেয়াদে মেয়র থাকার ফলে স্থানীয় এবং জাতীয়ভাবে শক্ত রাজনৈতিক বলয় প্রতিষ্ঠা করেন। নরসিংদী-৪(বেলাব-মনোহরদী) আসনের সাংসদ, বাংলাদেশ সরকারের শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুনের মত বাঘা রাজনৈতিক নেতাও রয়েছে তাঁর দিকে। এ নির্বাচনে তিনি এবং তাঁর সমর্থকেরা প্রায় নিশ্চিত ছিলেন কামরুজ্জামান কামরুলই পাচ্ছেন মনোনয়ন। কিন্তু বিপরীত ধারার নেতা আশরাফ হোসেন সরকার মনোনয়ন পাওয়ায় সকলের আশার গুড়ে বালি পড়ে।

পরবর্তীতে নানা নাটকীয়তার পর আশরাফ হোসেন সরকারের মনোনয়ন বাতিল করে নতুন করে প্রার্থী করা হয় আমজাদ হোসেন বাচ্চুকে। এতে কামরুল পন্থীদের হালে পানি আসলেও শঙ্কা কাটাতে পারেনি। আমজাদ হোসেন বাচ্চুর জয়-পরাজয়ের উপরই নির্ভর করছে নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগের পরবর্তী নেতৃত্বে কারা আসবেন। তাই মেয়র নিজে এবং তাঁর সমর্থকেরা নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন একেবারে গুছিয়ে। এখন দেখবার পালা ১৪ ফেব্রুয়ারি বিজয়ের মালা কে পরে।

একযুগেরও বেশি সময় ধরে নরসিংদী আওয়ামীলীগের রাজনীতি দুটি ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে আছেন নরসিংদী-১ আসনের সাংসদ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরু(বীর প্রতীক) ও অপর পক্ষে নরসিংদী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আঃ মতিন ভূইয়া ও মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল। দুই পক্ষের মধ্যে চলছে স্নায়ু যুদ্ধ। কখনো কখনো এ যুদ্ধ দৃশ্যমান হয় দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচী পালনে একই ইস্যুতে পৃথক আয়োজনে। এসব আয়োজনে একপক্ষ আরেক পক্ষকে কটাক্ষ করে বক্তব্যও প্রদান করে থাকে।

নরসিংদী আওয়ামীলীগে দুটি ধারা চলমান থাকার কারণে এবার পৌরসভা নির্বাচনে কোন ধারার প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পাবেন তা ছিল রাজনৈতিক আলাপের কেন্দ্রবিন্দুতে। আমজাদ হোসেন বাচ্চু মেয়র পন্থী সে মনোনয়ন পাওয়ায় হিরু পন্থীরা কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন।

কিছুদিন আগে নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাংসদ নজরুল ইসলাম হিরু ও সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আঃ মতিন ভুইয়াকে তাঁদের নিজ নিজ পদ হতে অব্যহতি দেন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় পরিষদ। হয়তো এ নির্বাচনের পরেই জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন হবে, সম্মেলনে নতুন কমিটি গঠন করা হবে। নতুন কমিটিতে কোন ধারার লোকের আধিপত্য থাকবে তা অনেকাংশে নির্ভর করছে পৌর নির্বাচনের ফলের উপর। কারণ এ নির্বাচনে হিরু পন্থী এসএম কাইয়ুম দলীয় মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমজাদ হোসেন বাচ্চুর সঙ্গে নির্বাচন করছেন। যদি নির্বাচনে বাচ্চুর নৌকা আর কাইয়ুমের মোবাইল ভোটের স্রোতে ভেসে নেটওয়ার্কের বাইরে চলে যায় তাহলে বিপদ দু গ্রুপেরই। তবে যদি নৌকা বা মোবাইল স্রোত প্রবাহে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে তাহলে বিজয়ীর হাতেই নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব থাকবে বলে ধারনা করছেন অনেকেই।

আবার অনেকে মনে করছেন দলে বিভক্তি থাকাটা স্বাভাবিক। তবে দলের নেতাকর্মীদের উচিত দলীয় সিদ্ধান্তকে সম্মান দেখানো। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নিজেদের অবস্থান ঠিক করা শোভনীয় নয়। মেয়র যেভাবে দলীয় প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছেন তা দলভক্ত একনিষ্ঠ নেতার পরিচয় বহন করে। যেহেতু মেয়র দলের একটি শাখার দায়িত্বে আছেন সেহেতু তিনি তাঁর কর্তব্য পালন করছেন। পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মেয়র পদ নিয়ে। যদিও কাউন্সিলর পদে দল সমর্থিত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তবে সেটি মূখ্য নয়।

নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক নেতা মিরর কে বলেন,’সকল সম্ভবনা থাকার পরেও কামরুজ্জামান কামরুল মনোনয়ন না পাওয়া স্থানীয় রাজনীতিতে তার সুনামে কিছুটা কমতি পড়লেও সেটা তেমন করে ভাবার বিষয় নয়। তবে যদি দুর্ভাগ্যবশত আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী না হয় তাহলে কামরুজ্জামান কামরুলের রাজনৈতিক ভবিষ্যত হুমকির মুখে। তখন হয়ত কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা কমে যাবে। তিনি দলীয় বড় কোনো দায়িত্ব নাও পেতে পারেন।’

তাই পৌরশহরের সচেতন নাগরিক ও আওয়ামীলীগ নেতারা মনে করেন, এ নির্বাচন মেয়র কামরুজ্জামান কামরুলের জন্য টিকে থাকার লড়াই। অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। তার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য আলোকবর্তিকা নরসিংদী পৌরসভার এ নির্বাচন।

নকি